নির্ধারিত সময়ে মধ্যে টিকা পাবে না বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও কোন প্রক্রিয়ায় টিকা দেওয়া হবে তা নিয়েও মাঠ পর্যায়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, যে কোনো প্রমাণপত্র দেখালেই করোনার টিকা পাবে স্কুল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এখানে প্রমাণপত্র বলতে কি বোঝানো হয়েছে তারও কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। তাই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অনেক স্কুলের শিক্ষার্থীর যেখানে কোনো পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) নেই সেখানে তারা (শিক্ষার্থীরা) প্রমাণ হিসেবে কি দেখাবে সেটিও স্পষ্ট নয়। তাই বেশির ভাগ স্কুলের প্রধানগণ এখন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র তৈরি কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।
টিকা দেওয়ার বা টিকা পাওয়ার সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকায় দেশের ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেনের প্রধানরা পড়েছেন বিপাকে। তাদের কাছে প্রতিনিয়তই অভিভাবকরা আসছেন কিভাবে তাদের সন্তানরা টিকা পাবে তা জানতে। কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রধানরা কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টের স্কুল এন্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী গতকাল বুধবার জানান, আমরা কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজের পক্ষ থেকে জেলা ও উপজেলা কমিটির মাধ্যমে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করেও শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে কোনো সুরাহা করতে পারেনি। আমাদের নেতৃবৃন্দকে শুধু বলা হয়েছে অপেক্ষা করতে। কিন্তু কবে এবং কিভাবে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে এখনো বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের মহাসচিব মো: মিজানুর রহমান বলেন, দেশের কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে একটি বড় অংশ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে থাকে। কিন্তু এই বৃহৎ অংশটিকে টিকার বাইরে রেখে করোনামুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন কখনই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
অন্য একটি সূত্র জানায়, দেশের কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী বাদ দিয়ে শুধু মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী যাদের বয়স ১২ থেকে ১৭ বছর এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা হবে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ। কিন্তু সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় এই বিশাল অংকের শিক্ষার্থীরা আপাতত করোনার কোনো টিকা পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (স্কুল শাখা) মো: বেলাল হোসাইন এই প্রতিবেদককে জানান, প্রথম পর্যায়ে শুধু এমপিওভুক্ত স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরাই টিকা পাবে। তবে কোনো শিক্ষার্থী টিকার আওতার বাইরে থাকবে না। দ্বিতীয় পর্যায়ে বেসরকারি স্কুল তথা কিন্ডারগার্টেনগুলোর শিক্ষার্থীরা করোনার টিকা পাবে। অর্থাৎ কোনো শিক্ষার্থীই করোনার টিকার বাইরে থাকবে না।
মাউশির সূত্র আরো জানায়, শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয়ভাবে টিকা দেওয়ার কোনো রোস্টার করা হবে না। প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা তাদের সুবিধা ও অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধার আলোকে সিদ্ধান্ত নেবে কিভাবে কখন কোন স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে। এক্ষেত্রে একটি উপজেলায় সব স্কুলের সুবিধাজনক লোকেশনে একাধিক কেন্দ্র নির্ধারণ করে অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের রোস্টারের আলোকে টিকা দেয়ার কাজ সম্পন্ন করবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার শর্তও শিথিল করা হয়েছে। এখন স্কুলের আইডি কার্ড কিংবা যে কোনো প্রমাণপত্র দেখালেই দেওয়া হবে টিকা।। শিক্ষার্থীরা আইডি কার্ড নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবে। কারও আইডি কার্ড না থাকলে সেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেখালে টিকা দেওয়া হবে। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে টিকার বাইরের থাকা মাধ্যমিক পর্যায়ের ৭৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ জন শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসেবে দৈনিক পৌনে চার লাখ শিক্ষার্থীকে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ১ কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৩২২ জন। তাদের মধ্যে ৪৪ লাখ প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছে। ৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ জন দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছে। মোট ৪৮ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ শিক্ষার্থী করোনার টিকা পেয়েছে। ৭৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ শিক্ষার্থী করোনার কোনো টিকা পায়নি। দেশের ৩৯৭টি উপজেলায় ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ১২-১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শেষ করতে পারবেন জানিয়ে দীপু মনি বলেন, বাকি উপজেলায় আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে টিকা দেওয়া শেষ করা যাবে। আশা করছি আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থীর প্রথম ডোজ শেষ করতে পারব।
Comments
Post a Comment