বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাবনা
দেশে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা শতাধিক। ১৯৯২ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন (সংশোধিত ২০১০)-এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এগুলো। সামনে এগিয়েছে নানা সম্ভাবনা, সাফল্য ও ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে। আমাদের এখন বিচার করে দেখতে হবে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের উচ্চশিক্ষায় কী ভূমিকা পালন করছে এবং উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা তাদের সম্ভাবনাগুলো কতটা কাজে লাগাতে পারছে।
বিজ্ঞাপন
আমরা যদি বহির্বিশ্বের দিকে তাকাই, তাহলে দেখব পৃথিবীর নামকরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত। যেমন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি, এমআইটি, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইয়েল ইউনিভার্সিটি। এগুলো সুনাম কুড়িয়েছে তাদের উচ্চ মানের শিক্ষা ও গবেষণার জন্য। চাকরির বাজারে তাদের স্নাতকদের চাহিদা ও নিয়োগ চোখে পড়ার মতো।
বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে অবদান রাখার অনেক সুযোগ রয়েছে। তাদের প্রথমেই নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষার মান। যে শিক্ষা তারা শিক্ষার্থীদের দিচ্ছে, তা যুগোপযোগী কি না, সে শিক্ষা িশক্ষার্থীরা ঠিকমতো আয়ত্ত করছেন কি না, শিক্ষণ মূল্যায়ন যথাযথ হচ্ছে কি না, এসব হবে তাদের প্রথম ও প্রধান বিবেচ্য। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো শিক্ষক থাকলে, পরিচালনা পর্ষদ সৎ ও প্রতিশ্রুতিশীল হলে এবং মানসম্মত শিক্ষাদান নিশ্চিত করা গেলে তাঁদের মধ্য থেকে এমনিতেই জ্ঞান ও দক্ষতায় পারঙ্গম স্নাতক বেরিয়ে আসবেন এবং তাঁরা দেশীয় ও বৈশ্বিক সংগঠনে তাঁদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে পারবেন।
একটি দেশ ও সমাজ সামনে এগিয়ে যায় নিত্যনতুন প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক সূত্র উদ্ভাবনের মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। তাদের উচিত শিক্ষক ও ছাত্রদের গবেষণায় উৎসাহিত করা, গবেষণায় পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া ও গবেষণা–সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি করা। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, গবেষণায় যাতে তাত্ত্বিক বিষয়ের চাইতে প্রায়োগিক বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পায় এবং চিন্তায় থাকে দেশ ও সমাজের কল্যাণ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সময়োপযোগী আধুনিক শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারে। তারা নতুন নতুন বিভাগ খুলে, দ্রুত কারিকুলাম আপডেট করে এবং বিষয়-পারদর্শী শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে এ কাজটি সহজেই করতে পারে।
তারা উদ্যোক্তা ও চাকরিদাতা স্নাতক তৈরি করতে পারে। চলতি জনস্রোতের একজন নয়, তারা ‘লিডার’ তৈরি করতে পারে, যাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবেন। বেসরকারি বিশ্ববিদায়লয়গুলো সেশন জট নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে, ব্রেন ড্রেইন ঠেকিয়েছে, চেষ্টা করলে তারা অন্য ক্ষেত্রেও সফল হবে।বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ছাত্র সংগ্রহের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। যদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের শিক্ষা–কার্যক্রম আন্তর্জাতিকীকরণে জোর দেয়, তাহলে বিদেশি ছাত্রের আগমনের মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে সহায়তা করবে। তবে এখানেও একই কথা, আন্তর্জাতিক ছাত্রবাজার ধরতে হলে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা কার্যক্রম লাগবে।
Comments
Post a Comment