শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও বিকল্প উপায়ে ক্লাস চলবে

 করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ হলেও অনলাইনে যথারীতি চালু থাকবে ক্লাস। এ ছাড়া আগের মতো আবারো শুরু হবে ক্লাসভিত্তিক অ্যাসাইনমেন্ট। একই সাথে সংসদ টিভির মাধ্যমে ধারণকৃত ক্লাস লেকচারও প্রচার করা হবে শ্রেণীভিত্তিক রুটিন করে। আর এসব একাধিক বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) একটি রোডম্যাপও তৈরি করে রেখেছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে করোনার সংক্রমণের হ্রাস বৃদ্ধির ওপরই। 


অবশ্য ইতোমধ্যে করোনার ঊর্ধ্বগতির প্রভাবে এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করতে আদালতে রিট করা হয়েছে। গতকাল বুধবার এ বিষয়ে একটি রিট আবেদন দাখিল করা হয়েছে। আজ বৃহ¯পতিবার এ বিষয়ে শুনানি হওয়ারও কথা রয়েছে। যদিও শিক্ষামন্ত্রী একাধিকবারই বলেছেন করোনার গতি প্রকৃতির ওপরেই নির্ভর করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার বিষয়টি তিনি আরো বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষার্র্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়েই প্রতিনিয়ত টেকনিক্যাল কমিটির সাথে আলোচনা ও পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে।


এ দিকে গত কয়েক দিনে একাধিক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জোর দিয়েই বলেছেন, এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়ে ভাবছে না সরকার। তিনি আরো বলেছেন, যেহেতু শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগই এখন টিকার আওতায় চলে আসছে কাজেই পরিস্থিতি এখনো অনুকূলে রয়েছে। তারপরও টেকনিক্যাল কমিটির সাথে এ বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে তবেই বন্ধ হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।


স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, দিন দিন করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকেই যাচ্ছে। গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে করোনার সংক্রমণের ঝুঁকিতে জেলার তালিকা ক্রমেই আরো দীর্ঘ হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতর দেয়া তথ্য মতে করোনার উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে ১২ জেলা এবং মধ্যম ঝুঁকিতে রয়েছে ৩১ জেলা। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, গত ৭ দিনে (১০ জানুয়ারি ১৬ জানুয়ারি) শনাক্ত ৩৪ হাজার ৪০৫ পূর্ববর্তী ৭ দিনে (৩ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি) শনাক্তের চেয়ে ২৩ হাজার ৯৩১ জন বা ২২৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। এ সময়ে ৭ দিনে (১০ জানুয়ারি-১৬ জানুয়ারি) মৃত্যু হয়েছে ৫৭ জনের। তালিকায় থাকা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলো হলো- গাজীপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া বগুড়া, দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, লালমনিরহাট, খাগড়াছড়ি ও পঞ্চগড়। আর এর আগের দু’টি জেলা ছিল ঢাকা ও রাঙ্গামাটি। অবশ্য করোনার প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার সরাসরি ঘোষণা না দেয়া হলেও পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়লে অনলাইন ক্লাস চালু করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি । তিনি বলেছেন, যদি এমন হয় যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে, ক্লাস চালু রাখা সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসে যেতে হবে।


সূত্র জানায়, করোনা মহামারীর কারণে প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত বছর সেপ্টেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা হয়। তবে স্কুলগুলোতে আগের মতো নিয়মিত ক্লাস শুরু হয়নি। এখনো সীমিত পরিসরে ক্লাস চলছে। এর মধ্যে গেল ডিসেম্বর মাসের শেষ দিক থেকে দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। মাসখানেকের ব্যবধানে দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা পাঁচ-ছয় গুণের বেশি বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজ এখনো বন্ধ ঘোষণা করা না হলেও টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশে যে কোনো সময়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হতে পারে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই মাউশি বিকল্প তিন পদ্ধতি নিয়ে এখনই কাজ শুরু করেছে। অর্থাৎ স্কুল-কলেজ বন্ধ অনলাইনে ও সংসদ টিভিতে ক্লাস চালু করা হবে। তৃতীয় বিকল্প হচ্ছে আগের মতো মেধা মূল্যায়নের জন্য ক্লাসভিত্তিক অ্যাসাইনমেন্ট চালু করা হবে।

Comments