করোনাই আবার: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের চিন্তাভাবনা
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও শনাক্তের হার দ্রুত গতিতে বাড়লেও খোলা রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম চলমান থাকলেও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রয়েছে চরম ঝুঁকিতে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা টিকা কর্মসূচির বাইরে থাকায় এ স্তরের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি কমে গেছে। এছাড়া অনেক অভিভাবক আক্রান্তের ভয়ে সন্তানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার করোনা আক্রান্তের হার ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ায় শিক্ষা প্রশাসনও শঙ্কিত। করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে দু-একদিনের মধ্যে সভা করে চূড়ান্ত সিদ্বান্ত নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাইলে করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা আজকালের খবরকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি খুবই উদ্বেকজনক হারে বাড়ছে। আজকে (বৃহস্পতিবার) আক্রান্তের যে তথ্য দেখেছি তা আশঙ্কাজনক। তবে বর্তমানে আক্রান্তদের মধ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম। আমরা দু-একদিনের মধ্যে বৈঠক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। তিনি আরো বলেন, গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কথা বলা হলেও তা মেনে চলছে না। অফিস-আদালত সবই চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা খুবই কম। করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১১ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
সারা দেশে বর্তমানে ১২ থেকে ১৭ বছয় বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। টিকা কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। টিকা নিতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। অনেকে মাস্ক পরছে না। টিকা নিতে গিয়েও অনেক শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে গত সোমবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ওইদিন সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের অন্তত এক ডোজ টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা এখনো টিকা নেয়নি, তাদের আপাতত স্কুলে যেতে নিষেধ করতে হবে। ১২ জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর হবে। যারা এরই মধ্যে টিকা নিতে পারবে না, তারা অনলাইনে বা টিভিতে ক্লাস করবে। আমরা অ্যাসাইনমেন্টের ব্যবস্থাও রাখব। ১২ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে মন্ত্রী বলেছেন, টিকা না পেলেও তারা স্কুলে যাবে।
১২ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে সংক্রমণের ঘটনা কম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে তাদের টিকা দেওয়ার কথা বলা নেই। ফলে এসব শিক্ষার্থী টিকা গ্রহণ ছাড়াই স্কুলে যেতে পারছে। তবে যেসব শিক্ষার্থী ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য কোনো রোগে ভুগছে, অথবা শ্বাসকষ্টের মতো জটিলতা আছে, কিংবা কোভিডে আক্রান্ত হলে যাদের ঝুঁকি বেশি, তাদের আপাতত স্কুলে না গিয়ে অনলাইনে ক্লাসে যোগ দিতে বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত না হলেও সরকার পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং তারা নিয়মিত আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। এক সপ্তাহ পর আবারো কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বসবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

Comments
Post a Comment